মানহানি আইনের সংশোধন কতটা ইতিবাচক
শরিফুল ইসলাম সেলিম
গত ২ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদে ফৌজদারি কার্যবিধি (সংশোধন) বিল পাস হয়েছে। এ সংশোধনীতে মানহানিকর সংবাদ প্রকাশের অভিযোগে করা মামলায় কোনো সাংবাদিকের বিরুদ্ধে সরাসরি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির বিধান বাদ দেওয়া হয়েছে।যা দীর্ঘ দিন ধরে আমাদের দেশের সাংবাদিকরা দাবি করে আসছিলেন।এই সংশোধনীর পর সাবেক বিচারপতি মোহাম্মদ গোলাম রাব্বানী এক প্রতিক্রিয়ায় বলেছিলেন “মানহানিকর সংবাদ এমন কোনো অপরাধ নয়, যাতে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করতে হবে। তাই এ সিদ্ধান্তটি যথাযথ হয়েছে। আইনটি নেতিবাচকভাবে ব্যবহারের সুযোগ নেই। সাংবাদিকেরা আদালতের কাছে দায়বদ্ধ। এ কারণে তাঁরা ক্ষমতার অপব্যবহার করতে পারবেন না।
আপাতদৃষ্টিতে এটি একটি ইতিবাচক এবং সময়োপযোগী ঘটনা। তথ্য অধিকার আইন পাস হওয়ার মাধ্যমে জনগণের তথ্য পাওয়ার অধিকার সৃষ্টি হয়েছে। তাই এর বহিঃপ্রকাশ ঘটবে সংবাদমাধ্যমে এটাই স্বাভাবিক । তাই সংবাদমাধ্যমকে নির্ভয়ে সব তথ্য বা সংবাদ জনস্বার্থে অবহিত করার সুযোগ দেয়া উচিত। এ অবস্থায় ফৌজদারি কার্যবিধি সংশোধন অত্যন্ত ইতিবাচক।এবং এর ফলে সাংবাদিকদের মানসিকভাবে সুরক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে, যাতে তাঁরা অহেতুক হয়রানির শিকার না হন। তবে মানহানি-সংক্রান্ত আইন সংশোধন করায় ইতিবাচক ও নেতিবাচক—দুই প্রভাবই আছে। ফৌজদারি আইনে জামিনযোগ্য মামলায় সাধারণত ওয়ারেন্ট জারি হয় না। সমন জারি হয়। কিন্তু মানহানি-সংক্রান্ত ধারায় জামিনযোগ্য মামলা হলেও ওয়ারেন্ট জারির ক্ষমতা ছিল। এটি ব্রিটিশ আমলে প্রণীত আইন। এখন এটি করা হয় ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে কোনো সংবাদ পরিবেশন যেন না করে এ পথ বন্ধ করার জন্য। কিন্তু বর্তমানে মানহানি-সংক্রান্ত মামলায় সমন জারি করাই যথেষ্ট। কারও বিরুদ্ধে সমন জারি হলে আদালতে এসে জামিন চাইতে পারে। কিন্তু সরাসরি ওয়ারেন্ট জারি করে হেনস্তা করার প্রয়োজন নেই। এর ফলে সাংবাদিক, লেখকের ওপর রাজনৈতিক হয়রানি করার সুযোগ কমে যাবে। সাংবাদিকেরাও নির্বিঘ্নে সত্য খবর প্রকাশ করতে পারবেন।
তবে এর নেতিবাচক দিক হচ্ছে, একশ্রেণীর হলুদ সাংবাদিককে উসকে দেওয়া হতে পারে। অনেক পত্র-পত্রিকায়ই মিথ্যা ও বানোয়াট সংবাদ পরিবেশন করতে দেখা যায়। এগুলো উদ্দেশ্যপ্রণোদিত থাকে। এখন ওয়ারেন্ট ইস্যুর ক্ষমতা বাতিল হলে এগুলো উৎসাহিত হতে পারে। সাংবাদিকদের নামে যাচ্ছে তাই খবর পরিবেশন করার সুযোগ বেড়ে যাবে এবং তাঁদের জেল-জরিমানার ভয় কমে যাবে। সাংবাদিকতা একটি সম্মানের পেশা। এ পেশায় সম্মান রক্ষা করা তাঁদের দায়িত্ব। সবার উচিত, এ আইনকে সাধুবাদ জানিয়ে আরও দায়িত্ববান হওয়া।
লেখক,ছাত্র,৪র্থ বর্ষ, আইন ও বিচার বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন