মঙ্গলবার, ২৬ এপ্রিল, ২০১১

নব বারতা নিয়ে আসুক পহেলা বৈশাখ

শরিফুল ইসলাম সেলিম
পয়লা বৈশাখ। বাঙ্গালী জাতির জীবনে এক অবিস্মরনীয় দিন। বৈশাখ মানে- শুরু, আগামী দিনের স্বপ্নের। হাজার হাজার বছর ধরে বাঙ্গালী জাতি বৈশাখকে শুভসূচনা হিসেবে বরণ করেছে। বছরের নতুন সূর্যের সামনে বাঙালি আজ প্রণতি রাখবে এই বলে যে, জীর্ণপুরাতন যাক ভেসে যাক, মুছে যাক গ্লানী/তাপস নিঃশ্বাস বায়ে মুমূষর্ুরে দাও উড়ায়ে'। বৈশাখ আসে নতুন করে। নতুনের আলোয় আবহমান বাংলার দিক-দিগন্ত উদ্ভাসিত করে আসে নতুন দিন। নবপ্রভাতে বাঙালির জীবনে চারদিকে নতুনের কেতন উড়িয়ে এসেছে বৈশাখ। আকাশ-বাতাস ও প্রকৃতিকে অগি্নস্নানে শূচি করে তুলতে আসছে বৈশাখ। এরই সাথে বিদায় নিবে হাসি-কান্না আর আনন্দ বেদনার ১৪১৭ সন। নতুন করে যাত্রা শুরু করেবে বাঙ্গালী । এ যাত্রা আবার বিলিন হবে আগামী বৈশাখে। বাঙ্গালী পরম্পরায় এদিনটি কেবলই আনন্দের, নতুন করে শুরু করার। বর্ষবরণের উৎসবের আমেজে মুখরিত বাংলার চারদিক। একই সাথে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সকল বাঙ্গালী আজ নতুনের আবাহনে কবিগুরু রবীন্দ্র নাথ ঠাকুরের লেখা গীত সেই চিরায়ত সুর বাঙালির প্রাণে প্রাণে অনুরণন তুলবে। বাঙ্গালী এক সাথে গাইবে, 'এসো হে বৈশাখ এসো এসো'। আবার একইভাবে জাতীয় কবি নজরুলের কালজয়ী রচনা-, তোরা সব জয়ধ্বনি কর /তোরা সব জয়ধ্বনি কর/ঐ নূতনের কেতন ওড়ে কাল বোশেখীর ঝড়'। এ সুরধ্বনির মধ্যে দিয়েই বাঙালি নতুন বছরে সব অপ্রাপ্তি ভুলে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করবে। মাঠে-ঘাটে কচি-কাঁচার কলরব আর পেঁতপুঁত বাঁশি আর ঝুনঝুনির এলোপাথারি হরেক রকমের সুরধ্বনি। বাংলার গ্রামীন জীবনে পয়লা বৈশাখ বাংলা নববর্ষের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বহুদিনের। এই সন প্রবর্তনের সূচনা থেকেই। চিরকাল ঋতুর উপর ভিত্তি করেই হয় ফসলের চাষাবাদ। মোগল সম্রাট আকবর প্রচলন করেন বাংলা সনের। এর আগে মোগল বাদশাহগণ রাজকাজে ও নথিপত্রে ব্যবহার করতেন হিজরী সন। হিজরী হচ্ছে চন্দ্র বছর, যা নূ্যনধিক ৩৫৪ দিনে পূর্ণ হয় । কিন্তু সৌর বছর পূর্ণ হয় নূ্যনধিক ৩৬৫ দিনে। বছরে প্রায় ১১ দিনের পার্থক্য হওয়ায় হিজরী সন আবর্তিত হয় এবং ৩৩ বছরের মাথায় সৌর বছরের তুলনায় এক বছর বৃদ্ধি পায়। কৃষকের কাছ থেকে রাজস্ব আদায় করতে হলে সারাদেশে একটি অভিন্ন সৌর বছরের প্রয়োজন। এই ধারণা থেকেই সম্রাট আকবর ১৫৮৪ খৃস্টাব্দের ১০ বা ১১ মার্চ থেকে বাংলা সনের প্রবর্তন করেন এবং তা কার্যকর হয় তার সিংহাসন আরোহনের সময় অর্থাৎ ১৫৫৬ খৃস্টাব্দের ৫ নভেম্বর থেকে। আকবরের নবরত্ন সভার আমির ফতেউল্লাহ খান সিরাজী বাংলা সন প্রবর্তন করেন। প্রথমে এই সনের নাম ছিল ফসলী সন। পরে তা বঙ্গাব্দ নামে পরিচিত হয়। বৈশাখ নামটি নেয়া হয়েছিল নক্ষত্র বিশাখার নাম থেকে। 'বিশাখা হতে নাম হল বৈশাখ। অতীতে বাংলা নববর্ষের মূল উৎসব ছিল হালখাতা। চিরাচরিত এ অনুষ্ঠানটি আজও পালিত হয়। ক্রমান্বয়ে নববর্ষের ব্যাপ্তি আরো বিস্মৃত হয়। রূপান্তরিত হয় লোকজ উৎসবে। কালের বিবর্তনে নববর্ষের সঙ্গে সম্পর্কিত অনেক পুরনো উৎসবের বিলুপ্তি ঘটেছে, আবার সংযোগ ঘটেছে অনেক নতুন উৎসবের। এদেশে ১৯৬৫ সাল থেকে রমনার বটমূলে প্রতিবছর ছায়ানট বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন শুরু করলে পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠানমালা নগরীতে নতুন তাৎপর্য পায়। একে একে আরো অনেক সংগঠন প্রতিবছর নিয়মিতভাবে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করছে। আধুনিক জীবন-পদ্ধতির নানা উপাচারের সমারোহে খেরো খাতায় হিসাব রাখার প্রচলন এখন উঠেই গেছে। তবু বাঙালির চিরায়ত উৎসবের দিন পহেলা বৈশাখে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অনুষ্ঠিত হয় হালখাতা, মিষ্টিমুখ করান হয় ক্রেতাদের।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন